গদ্যকাব্য
গদ্যকাব্য কাকে বলে ? সংস্কৃত গদ্যসাহিত্য কয়ভাগে বিভক্ত ও কী কি ? সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।
আচার্য দণ্ডী তার “কাব্যাদর্শ” গ্রন্থে গদ্যর লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন- “আপাদ : পদসন্তানো গদ্যম্”- অর্থাৎ, যে পদ সমষ্টি পাদ বা চরণে গ্রথিত নয়, তাই গদ্য নামে পরিচিত।
আবার বিশ্বনাথ কবিরাজের মতে, যে কাব্যে বৃত্ত বা ছন্দের লেশমাত্র থাকে না, তাকে গদ্যকাব্য বলে।
সংস্কৃত গদ্যসাহিত্য দুইভাগে বিভক্ত। যথা- i) কথা এবং ii) আখ্যায়িকা।
গদ্যসাহিত্যের উৎপত্তি:- পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাচীন সাহিত্যগুলি পদ্যে রচিত । গদ্যসাহিত্যের উৎপত্তি বহু পরে।
ভারতীয় কবিগনও সর্বদা গদ্যের থেকে পদ্যের স্থান সর্বাগ্রে দান করে এসেছেন। বেশিরভাগ টীকা এবং ভাষ্যগ্রন্থগুলিও পদ্যে রচিত।
কৃষ্নযজুর্বেদে সর্বপ্রথম সামান্যতম গদ্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। অথর্ববেদেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে গদ্যের নিদর্শন পাওয়া যায়।
কিন্তু এদের কোনোটিই সাহিত্য রচনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। “রামায়ণ”, “মহাভারত”, “বিষ্ণুপুরাণ” ও “ভাগবৎপুরাণ”-এ এবং চরকের আয়ুর্বেদশাস্ত্রে গদ্যের ব্যাবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীকালে মহর্ষি পতঞ্জলির “মহাভাষ্য”, “ন্যায়সূত্র”, “ব্রহ্মসূত্র”,”মীমাংসাসূত্র” এবং বিভিন্ন উপনিষদ্- এর টীকায় উচ্চপর্যায়ের গদ্যরচনার নিদর্শন মেলে।
গদ্যকাব্যের নিদর্শন:- সংস্কৃত গদ্যকাব্যের জগৎ-এ দণ্ডীর “দশকুমারচরিতম্”, সুবন্ধুর “বাসবদত্তা” এবং বানভট্টের “হর্ষচরিত” ও “কাদম্বরী” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(i) দশকুমারচরিতম্:-
দণ্ডী রচিত “দশকুমারচরিতম্” গদ্যকাব্যটি পূর্বপীঠিকা এবং উত্তরপীঠিকা নামে দুই অংশে বিভক্ত।কাব্যটিতে মগধের রাজনৈতিক কাহিনী চিত্রিত হয়েছে। মগধরাজকুমার রাজবাহন এবং মগধরাজ রাজহংসের ৯জন মন্ত্রীপুত্রের জীবনকাহিনী অবলম্বনে গ্রন্থটি রচিত।
শ্লেষ, অর্থহীনশব্দভান্ডার এবং সুদীর্ঘ সমাসবদ্ধ পদে দণ্ডীর রচনা অযথা ভারাক্রান্ত হয়নি। চরিত্র-চিত্রনেও কবি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।সুবন্ধু এবং বানভট্টের তুলনায় দণ্ডীর রচনায় স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়।
(ii) বাসবদত্তা:-
রাজকুমার কন্দর্পকেতু এবং রাজকুমারী বাসবদত্তার প্রণয়নকাহিনী অবলম্বনে সুবন্ধুর “বাসবদত্তা” কাব্যটি রচিত। প্রাচীন ভারতীয় সমালোচকগন সুবন্ধুকে বানভট্ট-এর সাথে একাসনে বসিয়েছেন।
শব্দভান্ডার ভাববর্ণন এবং বিষয়ের উপস্থাপন প্রভৃতিতে উভয়ের কাব্যই সহধর্মী। কিন্তু বানভট্ট যেমন কল্পনার জগতে অনেক উপরে উঠতে পারেন, সুবন্ধু তা পারেন না। সুবন্ধুর কাব্যে হাস্যরস অনুপস্থিত। কিন্তু চরিত্র-চিত্রন ও নগরাদির বর্ণনায় সুবন্ধুর কবিপ্রতিভা প্রশংসার দাবি রাখে।
বানভট্ট
(iii) বানভট্ট ছিলেন সম্রাট হর্ষবর্ধনের সভাকবি। তাই তার রচিত “হর্ষচরিত” গদ্যকাব্যটি হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালীন বিভিন্ন ঘটনা চিত্রিত হয়েছে। “হর্ষচরিত” আটটি উচ্ছ্বাসে বিভক্ত একটি আখ্যায়িকা শ্রেনীর গদ্যকাব্য।
প্রথম তিনটি উচ্ছ্বাসে কবি নিজের বংশাবলীর পরিচয় দিয়েছেন। তারপর চতুর্থ থেকে ষষ্ট উচ্ছ্বাসে থানেশ্বররাজ প্রভাকর বর্ধনের কার্যকলাপ, তাই দুই পুত্র রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধন এবং একমাত্র কন্যা রাজ্যশ্রীর জন্মবৃত্তান্ত, রাজ্যশ্রীর সঙ্গে গৃহবর্মার বিবাহ, রাজ্যবর্ধনের সিংহাসন গ্রহণ, গ্রহবর্মার মৃত্যু ও রাজ্যশ্রীর কারাবাস থেকে রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে।
সপ্তম-অষ্টম উচ্ছ্বাসে দেখা যায় হর্ষবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা এবং ভগিনী রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার করে হর্ষবর্ধনের নিজরাজ্যে প্রত্যাগমন প্রভৃতি ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। “হর্ষচরিত” কাব্যটিতে তৎকালীন ভারতবর্ষের একটি নিখুত চিত্র ফুটে উঠেছে।
go to next page
Discussion about this post