সংস্কৃত সাহিত্যে ঐতিহাসিক কাব্য সম্বন্ধে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা কর।
প্রাচীন ইতিহাসকে উপজীব্য করে রচিত কাব্যকেই ঐতিহাসিক কাব্য বলা হয়।
সূচনা:-
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে বিভিন্ন কবি, দার্শনিক, বৈয়াকরণ ও টীকাকারগন তাদের রচনাকে নিজ নিজ প্রতিভা অনুযায়ী উচ্চতম শিখরে উপস্থাপিত করেছিলেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় বেশিরভাগ কবিগনই তাদের কাব্যে নিজ আত্মজীবনী সম্পর্কেও কোনো তথ্য রেখে যায়নি। তাই প্রশ্ন উঠে সংস্কৃত কবিগনের ইতিহাস রচনা করার ইচ্ছা আদোও ছিল কিনা ?
কারণ, সংস্কৃত সাহিত্যে ঐতিহাসিক কাব্যের একান্তই অভাব দেখা যায়। একমাত্র পুরাণসাহিত্যের মধ্যেই ইতিহাসকে ধরে রাখার প্রথম প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। সংস্কৃত ও প্রাকৃতভাষায় রচিত ঐতিহাসিক কাব্যগুলি হল-
(i) হর্ষচরিত:-
খ্রীস্টিয় সপ্তম শতাব্দীতে রচিত বানভট্টের “হর্ষচরিত” কাব্যটিকে ঐতিহাসিককাব্য বলা হয়।
এটি আখ্যায়িকা শ্রেনীর গদ্যকাব্য। বানভট্ট সম্রাট হর্ষবর্ধনের জীবনকাহিনী অবলম্বনে কাব্যটি রচনা করেন।
আটটি উচ্ছ্বাসে বিভক্ত এই কাব্যটিতে প্রভাকরবর্ধনের মৃত্যু,রাজ্যবর্ধনের সিংহাসন লাভ, রাজ্যশ্রীর অপহরন, হর্ষবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা এবং রাজ্যশ্রীকে পুনরূদ্ধার করে পুনরায় রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন প্রভৃতি ঐতিহাসিক ঘটনাবলী উপস্থাপিত হয়েছে। তাই “হর্ষচরিত” একটি ঐতিহাসিক গদ্যকাব্য।
(ii) রাজতরঙ্গিনী:-
“রাজতরঙ্গিনী” কাব্যের রচয়িতা কলহন।
তিনিই সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনা করার পরিকল্পনা নিয়ে “রাজতরঙ্গিনী” রচনা করেন।
গ্রন্থটির রচনাকাল খ্রীস্টিয় দ্বাদশ শতক। কলহন ছিলেন কাশ্মীররাজ শ্রীহর্ষের সভাকবি।
তাই তার গ্রন্থে কাশ্মীরের ইতিহাসই প্রাধান্য পেয়েছে।
“রাজতরঙ্গিনী” শান্তরস প্রধান একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য। সমগ্র সংস্কৃত সাহিত্যে ঐতিহাসিক কাব্য হিসাবে “রাজতরঙ্গিনী” অদ্বিতীয়।
(iii) নবসাহসাঙ্কচরিত:-
এই গ্রন্থটির রচয়িতা পদ্মগুপ্ত।
খ্রীস্টিয় একাদশ শতকে ইতিহাসের পটভূমিকায় গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল।
অষ্টাদশ সর্গে রচিত এই কাব্যে সিন্ধুরাজ নবসাহসাঙ্কের সাথে নাগরাজ শঙ্খপালের কন্যা শশিপ্রভার প্রণয়কাহিনী চিত্রিত হয়েছে।
কাব্যটিতে ঐতিহাসিক উপাদান বিশেষ না থাকলেও সমালোচকগন একে ঐতিহাসিককাব্য বলেই স্বীকার করেছেন।
Go to Next page
Discussion about this post