◆রামায়ণ ও মহাভারত-এর পোর্বাপর্য বিচার কর।
Judgment of Ramayana and Mahabharata
=>সূচনা:-
অতীত দিনের ঠিক কোনো শুভলগ্নে আপামোর কাব্যপিপাসু ভারতবাসীর কাব্য তৃষ্না মেটাতে ভারতবর্ষে দুটি বৃহৎ মহাকাব্যের আবির্ভাব ঘটে। প্রথমটি আদিকাব্য নামে খ্যাত, যার নাম “রামায়ণ” এবং অপরটি “পঞ্চমবেদ” অর্থাৎ “মহাভারত”। ভারতীয়দের পরম আদরের এই দুটি মহাকাব্যের মধ্যে কোনটি পূর্ববর্তী এবং কোনটিই বা পরবর্তী- এই বিষয়ে জানার আগ্রহ সকলের। বিভিন্ন পন্ডিতগন এইদুটি মহাকাব্যের রচনাকাল নির্নয়ে প্রয়াসী হয়েছেন। কিন্তু মহাকাব্য দুটির রচনাকাল নির্নয়ে শুধুমাত্র অনুমান উপরই নির্ভরশীল। কবির ভাষায়-
“যেভূমি লইয়া এত হানাহানি
সে আজি কাহার তাহাও না জানি
কোথা ছিল রাজা, কোথা রাজধানি
চিহ্ন নাহিকো আর।।”
তবে অধিকাংশ পন্ডিতগনের মত অনুসারে আদিকাব্য “রামায়ণ”-কেই “মহাভারত”-এর পূর্ববর্তী বলে স্বীকার করা হয়েছে। কারণ-
স্বপক্ষে যুক্তি:-
১) বাল্মীকি আদিকবি নামে প্রসিদ্ধ এবং “রামায়ণ”-কে আদিকাব্য বলা হয়। সুতরাং, “রামায়ণ”-কেই “মহাভারত”-এর পূর্ববতী বলা হয়।
২) চারযুগের মধ্যে ত্রেতা যুগে রামাবতার এবং তারপরে দ্বাপরে কৃষ্নাবতার হওয়ায় “রামায়ণ”-কেই পূর্ববর্তী বলা যায়।
৩) “রামায়ণ”-এর যুদ্ধকান্ডের একটি শ্লোকটি “মহাভারত”-এর দ্রোণ পর্বে সম্পূর্ণ উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু “মহাভারত”-এর কোনো শ্লোক “রামায়ণ”-এ পরিলক্ষিত না হওয়ায় “রামায়ণ”-কেই “মহাভারত”-এর পূর্ববর্তী মনে হয়।
৪) “মহাভারত”-এর একাধিক স্থানে বাল্মীকির নাম পাওয়া যায়, কিন্তু “রামায়ণ”- এর কোনো স্থানে ব্যাসদেবের নাম পরিলক্ষিত না হওয়ায় “রামায়ণ”-কেই পূর্ববর্তী বলা হয়।
৫) “রামায়ণ”-এ সতীদাহপ্রথার কোনো উল্লেখ নেই, কিন্তু “মহাভারত”-এ মাদ্রীর সহমরনের উল্লেখ থাকায় নি:সন্দেহে বলা যায়, “রামায়ণ” সতীদাহ প্রথা প্রবর্তনের পূর্বে রচিত এবং “মহাভারত” সতীদাহ প্রথা প্রবর্তনের পরে রচিত হয়েছিল।
৬) “রামায়ণ”-এ বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না, কিন্তু “মহাভারত”-এ ভগবান বুদ্ধের বিভিন্ন কাহিনী পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায় “মহাভারত” বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের পরে রচিত হয়েছে।
৭) “রামায়ণ”-এর সভ্যতা অরণ্য প্রভাবিত। কিন্তু “মহাভারত”-এর সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক । এদিক দিয়েও “রামায়ণ”-কে “মহাভারত”-এর পূর্ববর্তী বলা যায়।
বিপক্ষে যুক্তি:-
ম্যাকডোন্যাল, ভিন্টারনিৎস প্রমুখ “রামায়ণ”-এর প্রাচীনত্ব স্বীকার করেন না। তাদের যুক্তিগুলি হল-
১) “মহাভারত”-এর বর্ণনা ভঙ্গিমা অনেক প্রাচীন। কিন্তু “রামায়ণ”-এর বর্ণনা ভঙ্গিমা কাব্যিক। সুতরাং, “মহাভারত”-এই হল প্রাচীনতম।
২) কাব্যশৈলীর বিচারও “রামায়ণ”-কে “মহাভারত”-এর পরবর্তী বলে মনে হয়।
৩) কুরূক্ষেত্র যুদ্ধের তুলনায় রাম-রাবণের যুদ্ধে অনেক মার্জিত বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। সুতরাং, বলা যায়- “মহাভারত”-এর যুদ্ধের পর “রামায়ণ”-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
৪) “মহাভারত”-এর রমনীগনের চরিত্রে ক্ষত্রিয় রমনীর সুলভ তেজস্বীতা ও শৌর্যের পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু “রামায়ণ”-এর রমনীগন পরবর্তীকালের মহাকাব্যে চিত্রিত রমনীদের মতো কোমল স্বভাবের।
মূল্যায়ন:- পরিশেষে বলা যায় যে, রামায়ণ ও মহাভারত -এর পৌর্বাপর্য নিয়ে পণ্ডিত মহলে নানা মতান্তর থাকলেও উপরিউক্ত যুক্তিগুলির আলোকে নি:সন্দেহে বলা যায় মহাভারত তার সমাপ্তি পর্বে পৌছানোর বহুপূর্বেই রামায়ণ তার সম্পূর্ণতা লাভ করেছিল। পাশ্চাত্য সমালোচক গনের মতে,- “Our present Ramayna is older than the Mahabharata in its present form”.
*****************************************************************************
Discussion about this post