গীতগোবিন্দম্। জয়দেবের গীতগোবিন্দ উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস
সূচনা:- গীতগোবিন্দম্” কবি জয়দেবের কোমলকান্ত পদাবলীর কাব্য। কবির স্বত:স্ফূর্ত হৃদয়াবেগে রচিত গীতিময় এই কাব্যটি ভক্তিমূলক গীতিকাব্যের সর্বশ্রেষ্ট নিদর্শন। এই কাব্যটি রচনা করে কবি জয়দেব বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে চির অমরত্ব লাভ করেছেন।
উৎস
শ্রীমৎ ভাগবত পুরাণ হতে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের বসন্তকালীন প্রেম লীলা কে কেন্দ্র করে জয়দেব এই ভক্তিমূলক গীতি কাব্যটি রচনা করেন।
নামকরণ— গীতগোবিন্দ নামকরণটি সবদিক দিয়ে যুক্তিপূর্ণ। কাব্যের নায়ক শ্রীকৃষ্ণ নায়িকা শ্রীরাধা।
নায়ক নায়িকা এখানে বিশ্বাত্মা জীবাত্মার প্রতীক। এই উভয় আত্মার বিচ্ছেদ ও মিলন বর্ণনা করেছেন 24 টি গীত এর মাধ্যমে। সুতরাং নামকরণটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সার্থক।
বিষয়বস্তু:- গ্রন্থের শুরুতেই কবি জয়দেব ভগবান বিষ্ণুর দশাবতারস্তোত্র করেছেন। তারপর প্রথম সর্গে বিরহিনী রাধার কৃষ্ণচিন্তা, দ্বিতীয় সর্গে উভয়ের বিরহজনিত ব্যাকুলতা, তৃতীয় সর্গে শ্রীকৃষ্ণের রাধার জন্য চিন্তা, চতুর্থ সর্গে সখীদের মাধ্যমে কৃষ্ণের নিকট রাধার অবস্থা নিবেদন, পঞ্চমসর্গে রাধার প্রতীক্ষা, ষষ্ঠসর্গে শ্রীকৃষ্ণের বার্তার প্রতিফলন, সপ্তম সর্গে শ্রীরাধার জন্য কৃষ্ণের ব্যকুলতা, অষ্টমসর্গে রাধার অভিমান, নবম সর্গে শ্রীরাধার মানভঙ্গের চিন্তায় কৃষ্ণের ব্যকুলতা, দশম সর্গে রাধার প্রতি কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়, একাদশ সর্গে উভয়ের মিলন সম্ভাবনায় উল্লাস, দ্বাদশ সর্গে রাধা-কৃষ্ণের মিলন বিলাস বর্ণিত হয়েছে।
কাব্য পরিচয় – গীতগোবিন্দ কাব্যটির প্রেমমূলক গীতিকাব্যের হলেও আধ্যাত্মিকতা ও ভক্তি রস এ পরিপূর্ণ। ভক্ত কবি জয়দেব এই কাব্যে রাধাকৃষ্ণের অপার্থিব প্রেমলীলা 12 টি সর্গে বিভক্ত করেছেন এরমধ্যে আশিটি শ্লোক ও 24 টি গীতের সমাবেশ রয়েছে। বসন্তকালের প্রারম্ভে প্রেমলীলা পরম নায়ক শ্রীকৃষ্ণ ও নায়িকা শ্রী রাধা পরস্পরের মিলন কামনায় ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছে। শ্রী রাধা শ্রীকৃষ্ণ বিরহে চলচ্ছক্তি হইয়াছে দেখিয়া তার সখী শ্রীকৃষ্ণকে আসিবার জন্য অনুরোধ করেন। শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক্ষায় সারারাত্রি অতিক্রান্ত হইলে শ্রীকৃষ্ণ উপস্থিত হয়। অভিমানিনী রাধার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। শেষে অনুনয়-বিনয় এরপর তাদের মিলনের মধ্যে গন্থের পরিসমাপ্তি ঘটে।
কাব্যবৈশিষ্ট্য:- (i) কবি জয়দেবের “গীতগোবিনদম্” মিলনান্তক ভক্তিমূলক গীতিকাব্য।
(ii) কবি গানগুলির ভাষা অতিমধুর এবং হৃদয়গ্রাহী।
(iii) কাব্যটি নাট্যগীতের আকারে লেখা।
(iv) চরিত্র চিত্রনেও কবি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
(v) কবির মতে, এই কাব্যের গীতশ্রবনে মনে হরি স্মরণের অনুভূতি জাগে।
vi) এই কাব্যের অমূল্য সম্পদ গীত গুলি অপরিহার্য ও মর্মস্পর্শী।
vii)সংস্কৃত শ্লোক এ অন্ত্যমিল আবশ্যক নয় কিন্তু গীতগোবিন্দের শ্লোকে অন্তমিল দেখা যায়।
viii)কাব্যে কবি প্রতিভা ও শিল্পীর সংযম লক্ষণীয়।
ix)সাহিত্য সঙ্গীত অভক্তি রসের মিলনক্ষেত্র হল গীতগোবিন্দ।
মূল্যায়ন:- কবি জয়দেবের তাঁর মিলন-বিরহ, মান-অভিমান, প্রতীক্ষা এবং Suspense প্রভৃতি প্রেমের সকল অভিব্যাক্তি গুলির চরম বিকাশ ঘটিয়েছেন। বাংলার বৈষ্ণব ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীচৈতন্য এই গ্রন্থটি নিত্য পাঠ করতেন। অলংকারের মাধুর্যে, শব্দের সৌন্দর্যে এবং ভাবের গভীরতায় কাব্যটি একটি স্বার্থক গীতিকাব্য।
পরিশেষে বলা যায় শাশ্বত সৌন্দর্য রচনা কৃতিত্বে ভাষার লালিত্যে ভাবে ও মাধুর্যে বাংলার কবি জয়দেব অনন্য কবিকুলতিলক।
Discussion about this post